মন্দিরে চুমুর দৃশ্য, নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে এফআইআর বিজেপির তদন্ত News News Desk প্রকাশিত: ৯:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২০ নেটফ্লিক্সের একটি সিরিজের দৃশ্যে এক মুসলিম যুবক মন্দিরের ভেতরে এক হিন্দু যুবতীকে চুম্বন করতে দেখা গেছে, ভারতে এই অভিযোগ ওঠার পর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। ‘আ স্যুটেবল বয়’ নামে ওই সিরিজটির বিরুদ্ধে একই অভিযোগে রাজ্যের বিজেপি ও বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর নেতারাও পুলিশে এফআইআর দায়ের করেছেন। নেটফ্লিক্স ভারতে ‘হিন্দু-বিরোধী’ কনটেন্ট প্রচার করছে এই অভিযোগ অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই তোলা হচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মনে করছেন, নেটফ্লিক্সসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে সে দেশে যেভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে সেটা শিল্পের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছুই নয়। বিক্রম শেঠের বিখ্যাত উপন্যাস ‘আ স্যুটেবল বয়’ নিয়ে একটি ছয় পর্বের টেলিভিশন ড্রামা কমিশন করেছিল বিবিসি-যা নির্মাণ করেছেন চিত্রনির্মাতা মীরা নায়ার। চলতি বছরেই যুক্তরাজ্যে বিবিসি ওয়ানে প্রদর্শিত হওয়ার পর তা এখন নেটফ্লিক্সের মাধ্যমে ভারতের দর্শকরাও দেখতে পাচ্ছেন, আর সেই সিরিজের কয়েকটি দৃশ্য নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। সমালোচকরা বলছেন, সিরিজের একটি দৃশ্যে মধ্যপ্রদেশের মহেশ্বর শহরের এক প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের প্রাঙ্গণে এক মুসলিম যুবক তার প্রেমিকা এক হিন্দু মেয়েকে চুমু খেয়েছেন- যাতে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্রর কথায়, এই সিরিজের কিছুই আমার স্যুটেবল লাগেনি- উচিত মনে হয়নি। মন্দিরের ভেতরে চুম্বন-দৃশ্য ফিল্ম করা হচ্ছে, পেছনে ভজনের সুর বাজছে – এটাকে আমি মানতে পারছি না। অন্য কোনও জায়গাতেও তো এসব করা যেত। তিনি বলেন, তা ছাড়া ওই যুবক-যুবতীও তো আলাদা ধর্মের, মুসলিম যুবককে দিয়ে একজন হিন্দু যুবতীর ওপর এসব করিয়ে কেন অযথা ধর্মীয় আবেগকে আহত করা হচ্ছে? এটা তো অনায়াসেই এড়ানো যেত। রাজ্য সরকার আরও জানিয়েছে, পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগের তদন্ত করার এবং ‘আ স্যুটেবল বয়ে’র নির্মাতাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেটা খতিয়ে দেখার। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির যুব শাখার জাতীয় সম্পাদক গৌরব তিওয়ারি নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রদেশ পুলিশে এফআইআর-ও দায়ের করেছেন। সিরিজ থেকে ওই আপত্তিকর দৃশ্যগুলো বাদ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তিনি, নেটফ্লিক্সকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে বলেও চিঠি দিয়েছেন। একই রকম দাবিতে সরব হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। ভোপালে সংস্কৃতি বিচার মঞ্চের নেতা চন্দ্রশেখর তিওয়ারির বলেন, ওই ফিল্মের চুম্বনদৃশ্যটির বিরুদ্ধে আমরা তীব্র আপত্তি জানাচ্ছি এবং এর পরিচালক-প্রযোজক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা করারও উদ্যোগ নিচ্ছি। তিনি বলেন, পুরো দেশের সব হিন্দু সংগঠনকেই আমরা বলব নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে তারা যেন এই আন্দোলনে যুক্ত হন। এর আগেও লায়লা, সেক্রেড গেমস ইত্যাদি বিভিন্ন সিরিজের কারণে নেটফ্লিক্স ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের মুখে পড়েছে। খুব সম্প্রতি নেটফ্লিক্সসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মকেও সেন্সরশিপের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মধুরা মুখার্জি অবশ্য বিবিসিকে বলেন, ইন্টারনেট-নির্ভর বিনোদনে এইভাবে রাশ টানার চেষ্টা আসলে অর্থহীন। মধুরা মুখার্জির কথায়, ইন্টারনেট এসে যাওয়ার পর সব ধরনের কনটেন্টই এখন হাতের নাগালে, তা সে পর্নোগ্রাফিই হোক বা অ্যাকাডেমিক কাজকর্ম। তিনি বলেন, ফলে নেটফ্লিক্স বা ওই ধরনের প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করা, সেন্সর করা বা না-করায় কিছু যায় আসে না। ওতে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া আর কোনও লাভ হয় বলে মনে হয় না। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি না একটা কিসিং সিনে ধর্মীয় অনুভূতিতে কোনও বিরাট আঘাত লাগতে পারে! আমার ধর্ম বলে ঈশ্বর তো সর্বত্রই, তাহলে সেই যুক্তিতে কোথাওই তো চুমু খাওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, কারও ধর্মবিশ্বাসে আঘাত দেওয়া উচিত নয় সত্যি, কিন্তু এটাও তো ঠিক এত অল্পেই যদি আমাদের আঘাত লাগে তাহলে তো কোনও ছবি বানানোই সম্ভব নয়! কোনও লেখাও লেখা সম্ভব নয়। সূত্র : বিবিসি বাংলা। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে এফআইআর বিজেপির তদন্তমন্দিরে চুমুর দৃশ্য